Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/রঙ্গনা পাল পর্ব:১৬


র বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/রঙ্গনা পাল পর্ব:১৬ 

 উফ্! শেষমেশ ভালোভাবে ও.টিতে ডঃ দিব্যাংশুকে সুনিপুণ ধাত্রীর মতো সহায়তা করতে পেরেছে রাজন্যা। ডাক্তারবাবুও ভীষণ খুশি রাজন্যার সক্রিয়তায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে নিল সে। মনকে প্রবোধ দিয়ে বললো, "তুই ঠিক পারবি"। একটু একটু করে পরিণত হচ্ছে সে, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে খুব বেশি দেরি নেই। মন বেঁধে নিয়েছে, দুর্বলতাকে ঝেড়ে ফেলে ক্রমশঃ আগামীর ভিত মজবুত করতে চলেছে। একটা সময় মনে হতো তার মতো দুর্ভাগ্য নিয়ে হয়তো আর কেউ জন্মায়নি, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতো এমন অভাগা কপাল যেন আর কারো না হয়। মাঝে মাঝে উদ্যম হারিয়ে ফেলতো, এখন অন্তত নিজের প্রতি আস্থা রাখতে সক্ষম হচ্ছে, এটাই শান্তির। এটা লাস্ট ইয়ার তারপরই ট্রেনিং শেষ হয়ে যাবে, অপেক্ষা শুরু হবে কবে চাকরি পাবে। চাকরি নিশ্চিত হলে তবেই বিয়ের কথা ভাববে। মোটামুটি এতটাই ভাবা আছে। ডান চোখের পাতাটা হঠাৎ তিরতির করে কাঁপতে শুরু করলো। মনের ভাবনায় ছেদ পড়লো। অজানা আশঙ্কায় ভেতরে ভেতরে উদ্বেগ বাড়তে থাকলো। এবার যতক্ষণ কোন ঘটনা না ঘটছে ততক্ষণ শান্ত হতে পারবে না রাজন্যা। ডান চোখের পাতা কাঁপাকে নিশ্চিত বিপর্যয়ের সংকেত ধরে এসেছে, হ্যাঁ এটা শতভাগ কুসংস্কার-এর প্রকোপ তবু কাকতালীয় ভাবে ডানচোখ কাঁপলে এতদিন ক্ষতি হয়ে এসেছে, তাই বিজ্ঞানের যুগে বসে, চোখের পাতা কাঁপার রহস্যের কথা জেনেও অন্ধত্ব কাটাতে পারেনি, অনেক আগে ডান চোখ কাঁপলে অধিকাংশ সময়েই মায়ের মার খেয়েছে বা অপমান সহ্য করেছে। এবার এখানে তাহলে কী ঘটতে চলেছে? দূর...ভালো লাগে না; আনন্দের রেশ তার জীবনে কেন যে দীর্ঘস্থায়ী হয় না! ডঃ দিব্যাংশুর সাথে ও টি করার সুখপ্রদ অভিজ্ঞতার স্বাদটা কেমন ফিকে হয়ে ডান চোখের কাঁপতে থাকা পাতাটা ভাবনার সমগ্রতায় অবলীলায় ঢুকে পড়ছে। ধ্যাৎ..জোর করে খানিকক্ষণ ডানচোখটা চেপে ধরেও কোন লাভ হল না। রাজন্যা দিদি, ও রাজন্যা দিদি-আপনার সাথে আপনার একজন আত্মীয় দেখা করতে এসেছেন, বলছেন- 'আপনার সাথে দেখা করা জরুরি' উনি বাইরে অপেক্ষা করছেন। ওঁর তাড়া আছে, আপনি তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখা করুন। রুম পরিস্কার করতে আসা মেয়েটি এসে খবর দিলো। আ্যাঁ, আমার আত্মীয়!! কে এলো আবার? বাবা বা স্বাধীন ছাড়া কেউ তো আসে না, তাহলে?? ওদের তো এখন আসার কথাও নয়। বেশ চিন্তিত ভাবে হোস্টেলের রুম থেকে বাইরে এসে রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলো রাজন্যা...সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রণয়। মৃদুলদার সাথে যোগাযোগ আছে, তার মুখেই শুনেছিল তারা দুজনেই বি এইচ এম এস-এ ভর্তি হয়েছে, ভবিষ্যতে ডাক্তারি করার সংকল্প নিয়ে। সেটা রাজন্যার নার্সিং ট্রেনিং-এ আসার আগের ঘটনা। অবাক কাণ্ড!! যে প্রণয় তার জীবনে প্রথম প্রেমের কলিকে ফুল হয়ে ফোটার আগেই বৃন্তচ্যুত করেছিল, একটিবারও তার আবেগটাকে বোঝার চেষ্টা করেনি, দ্বিতীয় বার যোগাযোগের সুযোগ না দিয়ে ভুল বুঝে তার চরিত্রে কালি লেপে ভীরুর মতো পালিয়েছিল, কোন খোঁজ খবর নেয়নি বিগত পাঁচ পাঁচটি বছর, আজ তাহলে কী মনে করে এখানে এসেছে? ইচ্ছে করছে অপমান করে তাড়িয়ে দিতে, কিন্তু পারছে না কেন? প্রেমের ফল্গুধারা বয়ে চলেছে ভেতরে ভেতরে। কটু কথা বেরোচ্ছে না, পরিবর্তে চাপা দেওয়া আবেগটার ছটফটানি বাড়ছে বরং... প্রণয়ের মনে হয়েছে সেই ভুল বুঝেছে রাজন্যাকে। ভুলের পরিধিতে গ্লানি বাড়ছিল বর্ষার কূল ছাপানো নদীর মতো, তাই না এসে পারেনি। বরাবরের লাজুক ছেলেটা এতদিনে আবিষ্কার করেছে, সে রাজন্যাকেই ভালোবেসেছে। পাঁচ বছর ধরে সাহস সঞ্চয় করে রাজন্যাকে বলতে এসেছে, 'ভালোবাসি'‌। রাজন্যা সামনে এসে দাঁড়ানোর পর এবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, কণ্ঠ রোধ হয়ে আসছে তার। কথা হারিয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করে শুধু বলতে পারলো- - একটু জল খাওয়াতে পারো? -হ্যাঁ, নিয়ে আসছি। জলের একটা বোতল হাতে করে নিয়ে এসে রাজন্যা বললো - -এই যে, নাও.. -আহ্! গলাটা ভিজলো এবার। (জল দিতে গিয়ে হাতে সামান্য ছোঁয়া লাগতেই সেই বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল, নাহ্ তার প্রতি ভালোবাসার অনুরণন বিন্দুমাত্র কমেনি। এমন ছোঁয়ার জন্য কত রাত নির্ঘুম কেটেছে। নীরবতায় আওড়ে যাচ্ছে "সেই তো এলে, কিছুদিন আগে কেন এলে না"। স্বাধীনকে দেওয়া কথার খেলাপি করা সম্ভব না কিছুতেই। আবেশ কাটিয়ে বাস্তবে ফিরল রাজন্যা) -বলো, কি বলতে এসেছো? - এমনি, অনেকদিন দেখিনি তাই.. -ওঃ.. -শুধু এইটুকু? -কী বলবো ? -নাঃ মানে কেমন আছো? -খুব ভালো, পায়ের তলার মাটিটা শক্ত হচ্ছে, এই আর কী! -আমায় তুমি ক্ষমা করে দিও, তোমায় ভুল বুঝে অনেকগুলো বছর নষ্ট করে ফেলেছি। এর ঠিক কী উত্তর হয় জানে না রাজন্যা। অনুভব করতে পারছে অতীত বর্তমানের সামঞ্জস্য বিধান করতে সে অপারগ। তবে এটা ঠিক, তার পুরানো বেদনায় কেউ যেন হাতুড়ির বাড়ি মারছে‌। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, মুখ আর মুখোশ মিলিয়ে যাচ্ছে। এতবার জীবনে ঠকেছে যে, বিশ্বাসের উপর বিশ্বাস উঠে গেছে একদম। তবু ট্র্যাজেডি এখানেই ; এতো কিছুর পরেও প্রণয়ের মুখের উপর কোন জবাব দিতে পারলো না। -এরপর আগামী সপ্তাহে.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ