Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল / পর্ব-১৮



র বেঁধেছে ঝড়ের পাখি 


        সন্ধেবেলায় ভেজানো ঘরের দরজায় ঠক্ ঠক্ ঠক্ আওয়াজ...হা হা হা... অনেকটা বোকার মতোই হেসে উঠলো রাজন্যা। হেলাফেলা ছাড়া তার বরাতে এখনও অবধি মনে রাখার মতো কিছু ঘটেনি। সদ্য পাওয়া রুমে ভালোমতো একটা দিনও অতিবাহিত করলো না এরই মধ্যে ভেতরে ঢোকার জন্য কেউ অনুমতি চাইছে; হুম্- ব্যাপারটা বেশ রাজকীয় মনে হচ্ছে! সত্যিই রাজকীয় তো? নাকি ভূতুড়ে? আরে নাহ্ ভরসন্ধেতে ভূত আসবে কোত্থেকে! আবার ঠক্ ঠক্ ঠক্.....উফফ্ আর পারা যায় না! ঘরের লোকগুলোর নাটুকেপনা অসহনীয় লাগছে ক্রমাগত... চুপচাপ আপন মনেই বিড়বিড় করতে করতে খাট থেকে নেমে দরজার মুখে এগোতে যাবে, এমন সময় আবার ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্...এবার অনবরত...খানিকটা বিরক্ত হয়ে রাজন্যা বলে- 'কে? চোখে কী ছানি পড়েছে? দরজা তো ভেজানো আছে, সামান্য কষ্ট করে ভেতরে প্রবেশ করার প্রয়াস করলেই তো হয়, তার জন্য এত ন্যাকামিপনার কোন মানে হয় না'...বলতে বলতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে স্বাধীন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

       -আরে তুমি?

        - হ্যাঁ গো রানি আমি। ভেতরে আসার অনুমতি দেবে তো?

         -এ মা! তুমি! এভাবে এখন! আমার সমস্ত কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে...

         -ভেতরে আসতে দাও, সব বলছি।

        

       কী কী না ভেবেছে রাজন্যা! তবে স্বাধীনের আসার কথা তার ভাবনায় আসেনি। আসবে কী করে? সে তো বাড়িতে স্বাধীনের ব্যাপারে তেমনভাবে কাউকে কিছু জানায়নি। কিন্তু ওকে -কে/কারা ভেতরে আসার ছাড়পত্র দিলো? সে বিন বলাকওয়ায় একেবারে তার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় কী করে যদি না কারো মদত থাকে। এবার আস্তে আস্তে রহস্যের পর্দাটা সরে যাচ্ছে; হঠাৎ রুম পাওয়া সাথে আবার নানাজনের আপ্যায়নের বহর। তখনই বুঝেছিল পরিবর্তনের পিছনে কোন গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। সেই মুহূর্তে আন্দাজ করতে না পারলেও এখন ভীষণভাবে নিশ্চিত এ সবের পিছনে স্বাধীনের লম্বা হাত রয়েছে। উপযাচনার এমন নমুনায় রাজন্যা মোটেও খুশি হতে পারেনি। কী প্রয়োজন চরিতার্থ করতে চাইছে স্বাধীন? এতো তাড়া কীসের তার? কোন চক্রান্ত চলছে না তো? এই তো সবে ট্রেনিং শেষ করে বাড়ি ফিরেছে, এরমধ্যেই তার অজান্তে এতকিছু ঘটে গেছে? কিচ্ছুটি জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি সে? মনের সাথে বোঝাপড়া করতে করতেই না সে বুড়ি হয়ে যায়! 


        -এতো কী ভাবছো? তুমি কি খুশি হতে পারোনি?

        নাহ্...

 স্বাধীন আলতো করে রাজন্যার কাঁধদুটো ধরে খাটের মধ্যে এনে বসিয়ে দিল। নিজেও একটা চেয়ার টেনে রাজন্যার মুখোমুখি বসে বললো-

       আমার পাগলি। উপরে কাঠিন্য, ভেতরে ভালোবাসার নরম নদী...

কোন কথা না বলে মৌনি হয়ে থাকল রাজন্যা। স্বাধীন এবার রাজন্যার অধর ধরে বললো..

      -খুব ভালোবাসি গো। আর কতভাবে বললে তুমি বুঝবে বলো তো?

       -আমি বুঝতে পারি না তোমার নিজের কাজ ছেড়ে কেন তুমি আমার ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়ছো?

       -তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, তোমার না পাওয়াগুলোতে পাওয়ার আনন্দ এনে দিতে চেয়েছিলাম, তোমার যন্ত্রণাগুলোকে নির্বাসন দিতে চেয়েছিলাম। তোমার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলাম আর চেয়েছিলাম তুমি তোমার মতো থাকো, কেউ যেন তোমার অধিকার খর্ব করতে না পারে। বলো আমি ভুল করেছি?

      -আমাকে তো বলতে পারতে।

     -তুমি কি বাধা দিতে না?

     -হয়তো দিতাম।

     -ধরে নিয়েছিলাম তুমি বাধা দেবে, তাই কিছু বলিনি..তবে...

      -তবে, কী?

      -কাজটা মোটেই সহজ হয়নি জানো?

      -কেন?

       -তোমার মাকে তো তুমি ভালোমতো চেনো। সে তো আমায় রীতিমতো নাকাল করে ছেড়েছে। তুমি কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারতে না।

       -কী হয়েছে খুলে বলো..

       -সব বলবো বলেই তো এসেছি প্রিয়ে। তবে তার আগে তোমার হাসিমুখ দেখতে চাই।


         এতক্ষণে রাজন্যার মনে হচ্ছে স্বাধীন যা করেছে শুধুমাত্র তাকে ভালোবেসেই করেছে। গর্ব হচ্ছে স্বাধীনের জন্য। ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো স্বাধীনকে পেয়েছে বলে। আর তো কিছু দিনের অপেক্ষা একটা চাকরি জোটাতে পারলেই পাকাপাকি একটা সিদ্ধান্ত নেবে। আর তাকে ভুল বুঝবে না। সে অনেকবার স্বাধীনকে অনেকসময় কটু কথা বলেছে, খারাপ ব্যবহার করেছে স্বাধীন কখনও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি বা তাকে আঘাত দেবার মতো কোন কাজ করেনি। নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে স্বাধীন তার ভালো করে এসেছে, আর মাকে ম্যানেজ করে সে প্রমাণ করে দিয়েছে তাকে কতটা ভালোবাসে। মুখে প্রশংসাবাচক কথা না বললেও অন্তরে অনুভব করছে স্বাধীনের গুণপনার। প্রআপ্তইর ঝুলিতে এই এতদিনে শান্তির পালক পড়ছে। একটু একটু করে স্বাধীনের প্রতি আস্থা জন্মাচ্ছে, বাকিটা তো ভবিষ্যত কবলিত। নাহ্! এবার নিদেনপক্ষে এককাপ চা অন্তত স্বাধীন পেতেই পারে। চা পর্ব চলতে চলতেই না হয় মার কীর্তির নতুন কাসুন্দি পরখ করা যাবে। চা বানানোর জন্য উঠে পড়লো রাজন্যা। স্বাধীনকে বলে গেলো- "একটু অপেক্ষা করো, চা নিয়ে ফিরছি, ধীরে সুস্থে তোমার কথা শুনবো।"



                    এরপর আগামী সপ্তাহে .....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ