ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/ রঙ্গনা পাল
অবধারিত ভাবে বিয়ের শুভ লগ্ন এসে গেল। ভারি মজার ব্যাপার রাজন্যার বিয়েতে সমস্ত কেনাকাটা করলো তার বোন অনন্যা। দু 'একটা অলংকারের মাঝে এক-আধটা নিজের জন্য সরিয়ে রাখতেও ভোলেনি সে। মা সমস্তটাই জানে বলে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথেই অনন্যা আগাম গুছিয়ে নিল কিছু কিছু । স্বাধীনের বাড়ি থেকে দাবি-দাওয়া ছিল না বলে রাজন্যার বাপের বাড়ি থেকে দায় সারা হচ্ছিল কোনমতে। বিয়ের বেনারসীটা কয় হাত কিনেছিল মাপা হয়নি তবে সর্বসাকুল্যে দুটো মাত্র কুচি পড়েছিল। রাজন্যার বাবার এক বন্ধুর অনুরোধে একটা কমদামি খাট বরাদ্দ করেছিল রাজন্যার বাবার বাড়ি থেকে। অবশ্য এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করেনি সে। নিজের যেটুকু ছিল কে কী ভাববে সেই ভেবে খরচ করতে পারছিল না আর একবছরে কতটুকু বা জমাতে পেরেছে?
স্বাধীনের পরিবার সাগ্রহে বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে। রাজন্যার উপর কোনরকম কোন চাপ প্রয়োগ করেনি উপরন্তু রাজন্যার ভাগের দায়িত্বও সাগ্রহে বহন করছে। স্বাধীনের আনন্দ আর ধরে না, এ তো একপ্রকার হারা বাজি বাজিকরের মতো জিতে নেওয়া। দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছে রাজন্যাকে পাওয়ার জন্য, বার বার অপমানিত হয়েছে তবু হাল ছাড়েনি। নিজের নাট্যদলকে বহুদিন যাবৎ সময় দেয়নি, মন দিয়ে চাকরিটাও করেনি কেবলমাত্র রাজন্যাকে পাওয়ার লক্ষ্যে স্থির থেকেছে। ওর পরিবারকেও ম্যানেজ করেছে। পরিণতিতে বিয়ের সানাই বেজেছে। এইবার রাজন্যাকে পাবে তার বাহুবন্ধনে। আত্মলিপ্সা চরিতার্থ করার সুবর্ণ সুযোগ এখন তার হাতের মুঠোয়। হা হা হা....আর কিছু সময়ের অপেক্ষা আর তারপর...নাহ্, নাহ্...এখনি এতটা উল্লাসের কিছু নেই...আরো খানিকটা সময় লাগবে...
বিয়ের সাজে নিজেকে বার বার দেখেও আশ মিটছে না রাজন্যার। আশা-আকাঙ্ক্ষার দোলাচল কাটিয়ে গোত্র পাল্টাতে চলেছে, জানে না কী আছে তার নসীবে! অনেকটা চড়াই উতরাই পেরিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে স্বাধীনের হতে চলেছে সে। আবেগ, অনুভব নয় সামান্য সংশয় চলছে মনের মধ্যে। সে জানে বিয়ের ব্যাপারে তার পরিবারের কোন উচ্ছ্বাসের বালাই নেই কিন্তু এটা জানে না তার বিয়েটা নির্বিঘ্নে হবে কী না! তার কল্যানকামী এই পরিবারে কেউ নেই। অতএব পিছুটান না রেখে বাপের বাড়ি থেকে চিরমুক্তি পেতে চেয়েছে রাজন্যা। স্বাধীনের মতো স্বামী আর তার মা বাবার মতো সহানুভূতিশীল শাশুড়ি শ্বশুরের সাহচর্যে বাকি জীবনটা স্বস্তিতে কাটানোর সুযোগকে সে ঈশ্বরের আশীর্বাদ রূপেই গ্রহণ করলো।
অচিরেই রাজন্যার সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হল। শাশুড়ির বধূবরণের আতিশয্যে রাজন্যার চোখে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সস্নেহে অশ্রু মুছিয়ে শাশুড়ি মা মমতার আঁচল বিছিয়ে দিলেন রাজন্যার দেহে। এই প্রথম মমতার স্পর্শ পেয়ে ভেতরটা কেমন ভরে গেল সুখের আবেশে। নিজের মায়ের চেয়ে দরদী মা থাকতে পারে এই সংসারে, স্বাধীনের মা'কে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতো না। বৌমার কী লাগবে, কোথায় থাকবে, কখন কী পরবে সমস্ত দিক তৎপরতার সাথে সামলাচ্ছেন তিনি। রাজন্যার মনে হল স্বাধীনকে বিয়ে করে কোন ভুল করেনি সে। আজন্ম ভালোবাসার জন্য কাঙালিপনা করে এসেছে, আজ এতদিনে বোধহয় তার প্রাপ্তিযোগ শুরু হয়েছে। এবার সহজেই নিজেকে স্বাধীনের সাথে এক করে নিতে পারবে নিশ্চয়। অনেকদিন ধরে মনের সাথে দ্বন্দ্ব চলছিল কীভাবে একঘরে স্বাধীনের সাথে থাকবে! এখন স্বাধীন তার পতিদেবতা। আর আজ দেবতাকে প্রিয় করে নিজেকেই না নয় সমর্পণ করবে তার কাছে।
--এরপর আগামী সপ্তাহে....
.jpeg)
0 মন্তব্যসমূহ