Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি /রঙ্গনা পাল / পর্ব-২৬




ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি/রঙ্গনা পাল/পর্ব-২৬


পূর্বজন্ম, পরজন্ম, কর্মফল এসবের চিন্তা মাঝে মাঝেই মাথায় আসে রাজন্যার। কখনও মনে হয় আগের জন্মে হয়তো পাপ করেছিল তাই এইজন্মে ফল ভুগতে হচ্ছে। আজ অবধি তো কিছুই ভালো হয়নি তার সাথে। যদিও সে থেমে নেই তার মত করে এগিয়ে চলেছে তবু মাঝে মাঝেই একটা যন্ত্রণা দলা পাকায় তার মনের বারান্দায়। কর্মফল বলেই না, সে জন্মাবার পর থেকেই অবহেলার পাত্রী। কুমারী মায়ের কাছে তার সন্তান অবাঞ্ছিত হলেও বিবাহিত নারীর কাছে তার সন্তান ঈপ্সিত। তবু যখন মায়ের আঁচল পায় না তখন তার মতো অভাগী আর কে ! বিয়ের পর শাশুড়িকে পেয়ে মনে করেছিল মা পেয়েছে। বছর ঘুরতেই তার ভোলবদল ঘটে গেল। বরকে পেয়ে ভেবেছিল সে হয়তো জীবন মরণের সাথি হবে। সে বিশ্বাস টলছে। স্বাধীন মা'কে ছেড়ে তার সাথে বেরিয়ে এসেছে একবাক্যে তবু রাজন্যা খুশি হতে পারে না, বিবিধ কারণ তার। কাজের মেয়েটা রাজন্যার চেয়েও স্বাধীনের কাছে একটু বেশিই খোলামেলা। রাজন্যার বোনের কারণে রাজন্যার বাপেরবাড়িতে স্বাধীনের আসা যাওয়া অবারিত। নাট্যদলের গায়ে পড়া মেয়েগুলো স্বাধীনের কাছে খোলা বইয়ের পাতার মতো। বউকেও ভালোবাসাবাসির বৈতরণীতে ঠাঁই দিয়েছে, কার্পণ্য নেই তিলমাত্র‌। সমস্তকে নজর না করলেও নজরে এসে যায়। স্বাধীনের প্রতি তার বিশ্বাস প্রতিমুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়েছে, সহজে এ বিশ্বাস জোড়া লাগবে মনে হয় না।


       না ভালো না মন্দ করে আরো দুটো বছর কাটে। বিয়ের তিন বছরের মাথায় রাজন্যা কনসিভ করে। স্বাধীনের কাছে তার সন্তান আসার খবর ডাল ভাতের মতোই ম্যাড়মেড়ে। না কোন আবেগ, না উচ্ছ্বাস আর না খারাপলাগা। খবর গেল স্বাধীনের মা'য়ের কাছে। এবার মা পরামর্শ দেয় রাজন্যাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসার। নতুন অতিথি আসার বার্তার পরেই রাজন্যার বদলির আদেশ এসে গেল। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে মথুরাপুর খুব বেশি দূর না। শাশুড়িমার বংশে প্রথম সন্তান আসছে এ নিয়ে চলছে চতুর্দিকে ঢাক পেটানো। স্বাধীনের অফিসটা বেশ দূরে তাই সেও রাজন্যাকে অনুরোধ করলো বাড়িতে ফিরে আসার। রাজন্যার ভেতরে আর একটা স্পন্দন অনুভূত হচ্ছে! মা হওয়ার অনুভূতি একটা মেয়ের কাছে কতটা একমাত্র সেই অনুভব করতে পারে। সুযোগ বুঝে তাকে ভাবানো হল এই অবস্থায় বাড়িতে থাকাই শ্রেয়। তার জন্য না হোক বাচ্চাটার জন্য সে যেন শ্বশুরবাড়ি ফেরৎ আসে। অন্ততঃ ঠিক সময় খাওয়াদাওয়া এবং ডিউটি তার সাথে যত্ন-আত্তির। রাজন্যার মন মানে না। হঠাৎ তার মাথায় এলো আচ্ছা স্বাধীনের মা জানে স্বাধীনের স্বভাবের কথা। নারী সঙ্গ ছাড়া একটা রাত কাটে না তার। সেদিনের কথা ভুলতে পারে না যেদিন কোয়াটারে এসে থাকার পর তার প্রথম নাইট ডিউটি পড়েছিল। কী কারণে ডিউটি থেকে কোয়াটারে ফেরৎ আসতে হয়েছিল। ভেবেছিল ভালোই হলো স্বাধীন একা রয়েছে একবার কথা হয়ে যাবে। এসে মধুজাদির সাথে স্বাধীনকে যেভাবে দেখেছিল তার হার্ট আ্যাটেক হওয়ার উপক্রম। স্বাধীন ভাবতেই পারেনি রাজন্যা ফিরে আসতে পারে। অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়েও ম্যানেজ করার জন্য বলেছিল তার ইচ্ছেতে কিছু হয়নি, মধুজা জোর করেছিল।


         মধুজাদি সত্যি দুঃখী, নিঃসঙ্গ। অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছে। আর বিয়ে করেনি। সেও রাজন্যার মত নার্সিং স্টাফ। উল্টোদিকের কোয়াটারে থাকে। মধুজাদি অপূর্ব সুন্দরী। ভগবান উজাড় করে তাকে রূপ দিয়েছেন কিন্তু সুখ দেননি। স্বামী শ্বশুরবাড়ি হারা, আবার মা মারা গেছেন। একমাত্র ভাইয়ের বউ তার বাপেরবাড়িতে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। সে নাকি অপয়া। বাবা মেয়ের জন্য পরিতাপ ছাড়া আর কোন সাহায্য করতে পারেন না। ভাগ্যিস এই চাকরিটা ছিল তাই এখনও সংগ্রামটা চালিয়ে যেতে পারছে। এই মধুজাদি রাজন্যার কাছে বড় দিদির মতো। ভীষণ ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। সে যে তার এতবড় সর্বনাশ করতে পারে নিজের চোখে না দেখলে ভাবতেই পারতো না। মধুজাদি অত্যন্ত লজ্জিত ভাবে বলে-

      -বিশ্বাস কর, এটা করতে চাইনি কিন্তু..

      -কিন্তু?

      -কিভাবে ঘটে গেল বুঝতেই পারলাম না

       -বাহ্!! অবাক কাণ্ড!

       - আসলে স্বাধীন বলেছিল গল্প করে কিছুটা সময় কাটাবে, তারপর...

       -বলো, কী বলার আছে?

        -মানে কিভাবে যেন সাড়া দিয়ে ফেলেছি..

        -এটা একদিনে হয়? 

         -হ্যাঁ, রে..আজ-ই প্রথম...

কান দুটো ঝাঁ ঝাঁ করছিল, পায়ের তলার মাটিটা কাঁপছিল, রাগে, ঘেন্নায় নিজের শরীরটাকেই অপবিত্র মনে হচ্ছিল। ওখান থেকে দ্রুত লম্বা লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এসেছিল।


           মধুজাদি আর কোন কথা বলতে না পারলেও স্বাধীন ঠিক তাকে নানা বাহানায় বুঝিয়েই ছেড়েছিল সে অপরাধী নয়, বরং একটা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে নিরীহ, গোবেচারা মাত্র। গা ঘিনঘিন করে স্বাধীনের কথা শুনলে। নাটক করতে করতে তার ব্যক্তিগত জীবনটাকেও নাটুকেপনায় ভরিয়ে তুলেছে। ওর সাথে এক বিছানায় থাকাটাকে নরকযন্ত্রণা বলে মনে করে। সহবাসে রুচি নেই কিন্তু একটা রাত সহবাসে বাধা দিলে স্বাধীন কেমন বন্য পশু হয়ে যায়। তাকে সামলানো রাজন্যার আয়ত্তের বাইরে। "স্বাধীন বলেছে এবারের মতো ক্ষমা করে দাও, দ্বিতীয়বার আর এমন হবে না" না চাইলেও ক্ষমা করতে হয়েছে। এরপর চোখের সামনে আর তেমন কিছু নজরে আসেনি। রাজন্যা এই ভেবে আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাইলো যেভাবেই হোক ছেলের গুণপনার কথা শাশুড়ির নজরে আনতে হবে। শ্বশুরের কথা ভেবেও ফেরার পক্ষে মনস্থির করলো। তাছাড়া তাদের বংশের সন্তান আসতে চলেছে, তাদেরও তো কিছু দায়িত্ব বর্তায়। সেখানে ফিরেই না হয় আর একবার দেখবে তার ভাগ্য তাকে কোথায় নিয়ে যায়!


          -এরপর আগামী সপ্তাহে........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ