Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি /রঙ্গনা পাল/পর্ব-২৭

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি /রঙ্গনা পাল/পর্ব-২৭


শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ির হাত তোলা হয়ে থাকতে ভালো লাগে না, তবু মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে চলেছে রাজন্যা। এই কদিনে শাশুড়ি তাকে বেশ চোখে চোখে রাখছে, নিয়মমতো খাবার দিচ্ছে, সাবধানী কথাবার্তা বলছে। তবু শরীরে কেমন যেন ঝিমুনি ভাব। কথা বলতেও জড়তা লাগছে। কিছু ভালো লাগছে না। স্বাধীন এখন মোটেই কাছে আসছে না, বরং একটু দূরত্ব রেখেই চলছে। যদিও এই সময়টাতেই তার বেশি সঙ্গ দেবার কথা ছিল। পেটের মধ্যে একটা প্রাণের অস্তিত্ব তাকে ভরিয়ে রেখেছে ঠিক-ই কিন্তু কেন যেন ভেতরের প্রাণশক্তি শুকিয়ে আসছে। স্বাধীনের হাবভাব ভালো লাগছে না, রোজ দেরি করে বাড়ি ফিরে আলাদা ঘরে শুয়ে পড়ে। মতিগতি ভালো ঠেকছে না। ছুটি থাকলেও রান্নাঘরে ঢুকতে দেয় না শাশুড়ি বলে "আগুনের পাশে এখন এসো না, সময় তো চলে যাচ্ছে না"। যেহেতু রান্না করতে দেয় না তাই এক ছুটির দিনে খাবার বেড়ে দেবার বায়না করলো। শাশুড়ি এতেও গররাজি। এমনকি ওর নিজের খাবারটাও ওকে বাড়তে মানা করলো। সেদিন খাবার টেবিলে সবার খাবার এসে গেল, তার খাবারটা বাদে। রাজন্যা ভাবল সেই না হয় নিজে নিয়ে আসবে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখে শাশুড়ি চামচ দিয়ে তরকারি নাড়ছেন। সন্দেহ তো আগে থেকেই ছিল তবে এতটা ভাবতে পারেনি। শাশুড়ি পিছন ফিরে ছিল বলে তাকে দেখতে পাইনি। সে চুপিচুপি ফিরে এসে পুনরায় খাবার টেবিলে বসে পড়ল। সেদিন সে তরকারিটা ফেলে দিয়েছিল সবার আড়ালে।


            এ তো মহা সমস্যা! শেকড় বেটে খাওয়ানোর প্রসঙ্গ সেদিন স্বাধীনকে বিশ্বাস  করাতে পারেনি। আজ নিজের চোখকে অবিশ্বাস করবে কীভাবে! কী মেশাচ্ছিল শাশুড়ি, শেকড় না অন্য কিছু! বাচ্চাটার কোন ক্ষতি হবে না তো! এরা মানুষ না পিশাচ কে জানে! এত সম্পত্তির মালিকানা থাকলেও সারাজীবন এদের কাঙালিপনা যাবে না। ছেলের মতোই মা'র নাটুকেপনার তুলনা হয় না! এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কী হবে ভাবতে পারে না। খুব কৌশলে এদের থেকে সরে যেতে হবে। কাজটা খুব সহজ হবে না, তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কাছাকাছি কোন বাড়ির খোঁজ চালাতে থাকে গোপনে। রাজন্যা বুঝে গেছে সে একা ছিল, এখনও একা। মথুরাপুর থেকে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে  মৃদুলদার সাথে দেখা। মৃদুলদার সাথে ছিল মানবী, মৃদুলদার বিবাহিত সুন্দরী স্ত্রী। মৃদুলদা রাজন্যাকে চিনতে পারেনি বলা ভালো স্ত্রী সাথে থাকলে সে প্রিয়তমাকে ছাড়া আর কিছু নজর করে না। যাই হোক মৃদুলদা রাজন্যার ডাকে সাড়া দেয়। সহধর্মিণীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে- "আমার ছোটবেলার বান্ধবী রাজন্যা।" রাজন্যা লক্ষ্য করে মানবী ভারি মিষ্টি দেখতে। চোখ দুটো অতল দিঘি যেন। গায়ের রং গোলাপের মতো। ঠোঁট দুটো চেরিফলের মতো। দিলখোলা হাসি। রিনরিনে কণ্ঠস্বর। বেশ আলাপী। অনর্গল কথা বলে চলেছে আর মুক্তোর মতো দাঁতের সারিতে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। দুটিকে একসাথে ভীষণ সুখী মনে হচ্ছে। নিজে সুখী না হোক আজ মৃদুলদার দেখে রাজন্যার অন্তরটা আনন্দে ভরে গেলো। মৃদুলদাকে বললো-

         -বৌদিকে দেখে খুব ভালো লাগলো

          -একদিন এসো আমাদের বাড়ি, বরকে সাথে নিয়ে এসো।

           -যাবো একদিন। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।

           -বলো,  তোমার বিয়ের খবর পেয়েছি। তবে একটু তাড়াতাড়ি করে ফেলেছো। একটু খোঁজ নিতে পারতে। তোমার জন্য খারাপ লাগে। জানি তুমি ভালো নেই।

          -হ্যাঁ, এখন তাই মনে হয়। কী বা করতাম! অনেকে অনেক কথা বললেও আমি কান দিইনি। আসলে আমিও মোহে আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলাম।

          -এখন একসাথে আছো তো?

          -একবাড়িতে আছি কিন্তু একসাথে নেই। শাশুড়িও তুকতাক করার চেষ্টায় রয়েছে।

         -বলো কী! এসব আবার হয় নাকি?

         -কাল নিজের চোখে দেখেছি।

          -কিছু বলনি?

         - না, এর আগে একবার এরকম হয়েছিল তখনই স্বাধীন মানতে পারেনি। এখন তো আরো মানবে না।

           - হ্যাঁ, ওকে চিনি সেই ছোট থেকেই। মা ছাড়া কিছুই জানে না। সবাই বলে মায়ের জন্য ছেলেটা বিগড়েছে।

          -বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে আমার কাছে আসে না সে।এখন তো আরো আমার কথা বিশ্বাস করবে না।

            -আচ্ছা তুমি যখন কাছাকাছি এসেছো, তখন না হয় আর একদিন এসে দেখা করে যাবো। তখন কথা হবে। আজ সামান্য তাড়া আছে।


               মৃদুলদার চলে যাওয়ার পথ চেয়ে খানিকক্ষণ চেয়ে রইল রাজন্যা। এই পৃথিবীতে প্রায় সবার ভালো থাকার অধিকার আছে, কেবলমাত্র তার ছাড়া! অজান্তেই দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো। নিজেকে নিয়ে ভাবার চেয়ে এখন যে আসছে তার কথা ভাবতে হবে। ওই বাড়িতে ঢুকলেই কেমন দম বন্ধ লাগে। একটা আলাদা ঘর খুঁজতে হবে। বাড়ি ফেরার পর শাশুড়ি যথারীতি খাবার নিয়ে হাজির। এ খাবার খাওয়া যাবে না। জেনেশুনে আর নিজের ক্ষতি করতে পারবে না। শাশুড়িকে বলে- 

         -মা, খুব ক্লান্ত লাগছে।একটু পরে খাচ্ছি। আপনি প্লিজ খাবারটা টেবিলে রেখে যান।

        -বেশ, খেয়ে নিও কিন্তু। খাবারটা ঘরে নিয়ে যেতে পারো, আরাম করে খেতে পারবে।

         -সেই ভালো। সাথেই নিয়ে যাচ্ছি। খেয়ে নেব।

          -হ্যাঁ, অবশ্যই খাবে মা, মনে রেখো যে আসছে তাকে ভালো রাখতে হবে।

     খুব ভালো হলো। সহজেই বাইরে ফেলে দিতে পারবে। কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে এসেছে, সেগুলোই খেয়ে নেবে। এভাবে আর কতদিন চলবে ঈশ্বর জানেন।


            ঈশ্বর বোধহয় কথাগুলো স্বকর্ণে শুনে ফেললেন। ঘণ্টা দুই পরে স্বাধীন এসে উপস্থিত। এসেই কোন ভণিতা না করেই বলে ফেলে-

        - সামনেই একটা নাটক হবে মথুরাপুরে। বায়না নিয়ে ফেলেছি। মহড়ার জন্য একটা বাড়ি ভাড়া নিচ্ছি। তুমি কি আমার সাথে যাবে?

         -মা কি রাজি হবে এই অবস্থায় যেতে দিতে?

         -ওটা আমার উপর ছাড়ো- তুমি রাজি কি না বলো? আমি কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারবো না।

         -হ্যাঁ রাজি।

         -কাল-ই যাবো। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ো।

যেমন ঝড়ের মতো এসেছিল, তেমনই বেরিয়ে গেল। তবে রাজন্যা হাতে চাঁদ পেল, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল। যদিও জানে কোন উদ্দেশ্য ছাড়া স্বাধীন কোন কাজ করে না, তবু আগে তো প্রাণটা বাঁচাতে হবে তারপর না হয় স্বাধীনের উদ্দেশ্য খোঁজা যাবে।


              -এরপর আগামী সপ্তাহে.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ