Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল / পর্ব-৩০


ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি

        

        রাত বাড়ছে। রাজন্যার মনের অন্ধকার প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। চোখ খোলা, ঘরের মধ্যে আলো জ্বলছে কিন্তু সেই আলোয়  রাজন্যা আশার মুখ দেখতে পাচ্ছে না। ছেলেটার দিকে একবার আড়চোখে দেখলো। এতক্ষণে ঘুমিয়েছে। একটু আগেও কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে ছিল। মায়ের কিছু একটা হয়েছে যার জন্য একটিবারও কোনরকম বিরক্ত করেনি মা'কে।  ছোট হলেও বাবার আচরণে মা ব্যথা পেয়েছে এতটুকু বুঝে গেছে। ওর মুখখানি বেশ শুকনো লাগছে। সে নিজেও কিছু খায়নি, বাচ্চাটাকেও খেতে দেওয়া হয়নি। নাহ্! বাচ্চাটার জন্য আজ কোন কষ্ট হচ্ছে না, কখন যেন কোনরকম অনুভূতি থেকে সরে এসেছে। ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া কোনটাই তেমন অনুভূত হচ্ছে না। চারপাশে কেবল আঁধার নেমে এসেছে মনে হচ্ছে। কেউ কোথাও নেই, কারো ছায়া পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না আশেপাশে। ছেলেটার মুখটাও ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে এলো। কোন সাধ, কোন পিছুটান টান নেই। কেমন মুক্তির গন্ধ নাকের মধ্যে, আর দারুণ একটা ঘোর। এবার আলোর মধ্যে বাম হাতের শিরাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ডানহাত দিয়ে একটা সূক্ষ্ম সূচ এসে চিরঘুমের ইনজেকশন পুশ করে কানে কানে মুক্তির বীজমন্ত্র দিয়ে গেল। এবার চোখের পাতা বুজে আসছে, আহ্ কী শান্তি!


          ছেলেটার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। হয়তো খিদেয়। মা'কে জাগানোর চেষ্টা করে। মা সাড়া দেয় না। আবারও কান্না শুরু হলো। তার মা তার ডাকে আর সাড়া দিচ্ছে না। ছুঁয়ে দেখে সারা শরীরটা কেমন কাঠ কাঠ লাগছে। পাশের ঘর থেকে ছেলের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছে স্বাধীন। রাজন্যাকে চড় মারার পর আর ও মুখো হয়নি, যদিও পরিতাপ হচ্ছে না তবু ছেলেটার কান্নায় পাশের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে রাজন্যা কেমন অকাতরে ঘুমোচ্ছে, ছেলেটার কান্নাতেও  মহারানির ঘুম ভাঙছে না! প্রচণ্ড রাগে মনে হচ্ছে ধাক্কা মেরে ঘাট থেকে নামিয়ে দেয়। রাগ সামলে সামনে আসতেই কেমন একটা সন্দেহ হলো।  গায়ে হাত দিতেই দেখে শরীরটা ঠান্ডা! মারাত্মক কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে! কী সেটা আঁচ করতে পারে না। বেঁচে আছে নাকি টেঁসে গেল? কানের পাশে হাত দেবার পর নাকের সামনে হাত এনে দেখে নেয় শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কী না! হাতের তালু আর পায়ের তলা খানিকক্ষণ ঘষার পর আ্যাম্বুল্যান্সে কল করে সোজা হাসপাতালে এনে ভর্তি করে দেয়। তারপর সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই হাসপাতালের স্টাফ বলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। 


        রোজ ভোরবেলা হাসপাতালের পাশে দিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরোয় স্বাধীনের বন্ধু অনুপম। আজ স্বাধীনকে হাসপাতাল থেকে দ্রুতগতিতে বেরোতে দেখে বেশখানিকটা অবাক হলো। পিছনে ডেকেও লাভ হলো না। সে যেন পালিয়ে বাঁচলো। কৌতূহল চাপতে না পেরে হাঁটা থামিয়ে পায়ে পায়ে হাসপাতাল চত্বরে এগিয়ে এলো। হাসপাতালে ঢুকে তো পড়লো কিন্তু জানবে কী করে? অনেক খোঁজ করার পর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শ্যামলীদির থেকে জানতে পারে কাল প্রায় ভোর রাতে এখানকার-ই নার্সিং স্টাফ রাজন্যা সুইসাইড করার চেষ্টা করে। সে মৃত্যুর সাথে এখনও লড়াই করে চলেছে, কী হবে বলা যাচ্ছে না তবে আর আধঘণ্টা দেরি হলে কোনভাবেই বাঁচানো সম্ভব হতো না এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজন্যার নাম শুনে পুরো ঘটনাটা বুঝে ফেলে সে।


    অনুপম সেনগুপ্ত স্বাধীনের ছোটবেলার বন্ধু। বিয়ের সময় একবার দেখেছিল আর একবার দেখা হয়েছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেই তখনই ভালোভাবে পরিচয় হয়েছিলো। আলোচনা হয়েছিলো স্বাধীনকে নিয়ে। কথায় কথায় বলেছিল সাবধানে থাকার কথা। রাজন্যা মৃদু হেসে সমর্থন জানিয়েছিল মাত্র। অনুপম রাজন্যাকে লড়াই করতে দেখেছে, মানিয়ে নিতে দেখেছে, সমঝোতা করতে দেখেছে, স্বাধীনের মতো একটা অপদার্থ ছেলেকে বছরের পর বছর সহ্য করতে দেখেছে। কিন্তু এভাবে হার স্বীকার করতে দেখে তাজ্জব হয়ে গেছে। ঠিক কী হয়েছিল তার সাথে? এতো সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো মেয়ে সে তো নয়! তাহলে? মেডিক্যাল কলেজে তার স্ত্রী ভর্তি থাকার সময় যে বাড়তি শ্রম দিয়েছিল, তার ঋণ অনুপম আমৃত্যু ভুলতে পারবে না। এইরকম পরোপকারী, মৃদুভাষী, সৎ এবং কর্মনিষ্ঠ একটা মেয়ে এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে পারে না। এখন সময় এসেছে ঋণ শোধ করার। রাজন্যার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে। বাড়িতে একবার খবরটা জানিয়ে দেওয়া দরকার।


              -এরপর আগামী সপ্তাহে...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ