Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল/ পর্ব-৩৪

 




ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল/ পর্ব-৩৪

     কামিনী জেনে ফেলেছে রাজন্যা এখন বহাল তবিয়তে স্বাধীনের বাড়িতেই রয়েছে‌। ওহ্! বাবুদের সব মিটমাট হয়ে গেল এর মধ্যে! রাজন্যার ছেলের জায়গাটাও কেমন নিশ্চিত হয়ে গেলো তাহলে। আর সেই শয়তান স্বাধীন আবার ভদ্র ছেলের মতো বাড়িতেই থাকছে? বাহ্! জীবনযাপন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে! নিশ্চয় স্বাধীনের মায়ের সাধু উদ্যোগ আর স্বাধীনের সহমতেই এটা সম্ভব হয়েছে।ব্যাস! আর কী চাই? তার জীবনটাকে নষ্ট করে দিয়ে এখন সুখে শান্তিতে ঘর করা হচ্ছে! এর বদলা সে নেবেই নেবে। এত সহজে পার পাবে না স্বাধীন, প্রয়োজনে তার জীবনটাকেও কামিনী নরক করেই ছাড়বে। বেশ কিছুদিন  কামিনীর কাছে আসেনি স্বাধীন। এখন ঘরের মধ্যেই সব পেয়ে যাচ্ছে তাই কামিনীকে সহজেই কোণঠাসা করে ফেলতেও বিবেকে বাধছে না তার। বারংবার ফোন-কল করছে কিন্তু প্রত্যেকবার-ই কলটা রিজেক্ট করে দিচ্ছে স্বাধীন। রাগে কামিনীর দাঁতের উপর দাঁত চেপে যাচ্ছে, চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে, গলা থেকে নিন্দাসূচক কর্কশ ধ্বনি বের হয়ে আসছে। নিজেকে সামলাতে পারছে না। একটা বিকট অন্ধকার নেমেছে তার সারা মন বেয়ে। অবসাদগ্রস্ত মন নিয়ে সারারাত নিজের সাথে বোঝাপড়া আর শেষ হয় না। সকাল হতে না হতেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে স্বাধীনের বাড়িতে গিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে আসবে। দরজা খুলে বাইরে পা রাখার আগেই স্বাধীন হাজির।


        স্বাধীন উসখুস করছিল কখন কামিনীর সাথে তার মায়ের প্ল্যানটা শেয়ার করবে। কয়েকটা রাত কামিনীর সাথে কাটাতে পারেনি বলে প্রচণ্ড আক্ষেপ জমে আছে। আজ সব পুষিয়ে নেবে। কথা পরে আগে কামিনীর শরীরে  ডুব দিয়ে মৃগনাভি ছড়িয়ে কামিনীর শরীরটাকে তরতাজা করে দিতে হবে। বড় অভিমানী মেয়ে। কী যে তৃপ্তি! কত যে মুক্তি কামিনীর শরীরের বাঁকে বাঁকে, কোন উপমাতেই বোঝানো যাবে না। যে ডুব দিয়ে মুক্ত ছুঁয়েছে, ছুঁয়েছে মারিয়ানা শুধু সেই জানে এর স্বাদ ঠিক কেমন। শুধুমাত্র মায়ের কথা রাখতে ও বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে, নতুবা বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই সেখানে যাবার। ছেলে রাজর্ষি তার কাছে একটা নাম মাত্র। কোন টান, কোন মায়া নেই । কেবল অপেক্ষা কবে মা-ছেলে পরিস্থিতির চাপে পড়ে  ঘরছাড়া হয়ে পথে নামবে। একটুও সহ্য করতে পারে না রাজন্যাকে। আগেও কখনও ভালোবাসেনি শুধু তাকে উপেক্ষা করেছিল বলেই আজ তার পরিণতি সে নিজেই ডেকে এনেছে। হ্যাঁ, ওর শরীরেও আগুন খুঁজে পেয়েছিল একদিন, বেশ উপভোগ্য ছিল ওর আঁটসাঁট বাঁধন কিন্তু এর জন্য অপেক্ষা আর ভালো লাগে না। এখন অরুচি জন্মে গেছে। ফিরেও তাকাতে ইচ্ছে করে না। কামিনী ঢের দিয়েছে তাকে। 


        স্বাধীনকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কামিনী। জামার কলার দুটো ধরতেই ঘাড়ে ধারালো নখের আঁচড়ের আঁচ পেয়ে দু'পা পিছিয়ে কামিনীর হাত দুটো ধরে নিচে নামিয়ে আনে স্বাধীন। কামিনীর অতর্কিত ক্ষিপ্রতার কারণ আন্দাজ করতে না পেরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। কোন উত্তর না দিয়ে কামিনী এবার এলোপাথাড়ি কিল মারতে শুরু করে। দু'একটা লাথিও এসে পড়ে স্বাধীনের উপর। কী করবে বুঝতে না পেরে কামিনীকে শক্ত জড়িয়ে ধরে। রাগের তীব্রতায় কামিনী  তার ধারালো নখ ব্যবহার করে স্বাধীনের পিঠে ভয়ংকরভাবে আঁচড়াতে থাকে। পরনের শার্টের দফারফা হয়ে যায়। আশ্চর্যের বিষয় কামিনী নিজে না তো কোন কথা বলছে, না স্বাধীনকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। উৎপীড়ন সহ্য করে স্বাধীন বলে- -"আমার কথা শোনো লক্ষ্মীটি, তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।" কামিনীর কিছুই শোনার নেই কোন নাটুকেপনা চলবে না। তাকে চটানোর ফল হাড়ে হাড়ে পাবে সে। আবার ফোন কেটে দেওয়া! তখন কিছু বলার ছিলো না, এখন সাফাই গাইতে এসেছে। মনেমনে গজরাচ্ছে কামিনী কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না, এটাই স্বাধীনের অস্বস্তির কারণ। ঘটনাটা আরো ভয়ংকর হলো যখন ঠেলা মেরে স্বাধীনকে বেওয়ারিশের মতো বাইরে বের করে দরজায় খিল তুলে দিলো কামিনী।


       কামিনীর কাছে গলাধাক্কার উপরি পাওনার সিকিভাগও স্বাধীনের আন্দাজে আসেনি কখনও। সিংহের মতো গর্জন আর বাঘের মতো বিক্রম আজ ভিজে বারুদের মতোই অসহায়। স্বাধীন চারপাশটা ভালোভাবে দেখে নিলো কেউ দেখছে কি না। নাহ্! ভাগ্য ভালো কেউ নেই আশেপাশে। কিন্তু শার্টটা লুকোবে কীভাবে? এখানের প্রতিবেশী কম-বেশি সকলে জানে নাটকের নায়িকার বাড়ি একমাত্র নাট্যকাররাই আসে। আর স্বাধীনের যাতায়াত নিয়ে কারো মনে আগে তেমন কৌতুহল ছিলো না সবাই মনে করত মেয়ের রোজগারে অথর্ব বাপ মায়ের পেট চলে। তবে রাজন্যা এখানে আসার পর সকলের মনেই গাঢ় সন্দেহ জন্মেছে। এর মধ্যে স্বাধীনকে এই অবস্থায় দেখে ফেললে আর রক্ষে নেই। হয়তো কোনদিন এপাড়ায় আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দ্রুত এখান থেকে কেটে পড়লেও বেশকিছু মানুষ স্বাধীনকে দেখে ফেলেছে। অন্যকে পাগল বানাতে গিয়ে নিজেই পাগলের মতো এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে ! বিধাতার রাজ্যে বুঝি নিয়মে ব্যতিক্রম নেই।


        স্বাধীনকে বিস্রস্ত অবস্থায় বাড়িতে পুনরায় ফিরতে দেখে মা বলেন- "-এই তো বের হলি এর মধ্যে এমন অবস্থা হলো কী করে?" কোন উত্তর না দিয়েই উপরে নিজের রুমে চলে আসে স্বাধীন। ড্রেসিং টেবিলের মধ্যে নিজেকে চিনতে পারে না। কয়েক ঘন্টায় নিজের চেহারার মধ্যে কালো কালো ছোপ ফুটে উঠেছে । মুখখানা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। বিবর্ণতায় ছেয়ে আছে মুখমন্ডল। ঘাড়ের দুপাশে আঁচড়ানোর চিহ্ন স্পষ্ট। পিঠের দিকে জামাটা ফেটে কী জঘন্য লাগছে। পিঠের মধ্যে জ্বালাটাও অসহনীয় মনে হচ্ছে। সমস্ত যন্ত্রণা ছাপিয়ে একটা কথাই স্বাধীনকে ভাবাচ্ছে, কামিনীর এমন আচরণের কারণ কী? সে তো কামিনীকে পাবার জন্যই এতসব করছে। তাহলে? কামিনী কি তাকে ভুল বুঝলো? এর আগে রাজন্যা যখন তার উপর চড়াও হয়েছিল তখন তো সমস্ত কিছু তাকে বলেছিল তাহলে? আজ এমন কী ঘটনা ঘটল? কীভাবে জানবে কামিনীর ভেতরের কথা? কীভাবে আবার ফিরবে কামিনীর কাছে?


            -এরপর আগামী সপ্তাহে......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ