Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ধারাবাহিক উপন্যাস: ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল -পর্ব: ৬

 

         

ধারাবাহিক উপন্যাস: ঘর বেঁধেছে ঝড়েরপাখি / রঙ্গনা পাল -পর্ব: ৬        

     বৃষ্টি অনেকক্ষণ আগেই থেমে গেছে। তবে মেঘ কাটেনি পুরোপুরি। গুম হয়ে আছে আকাশটা। এলোমেলো মেঘগুলো একে অপরের উপরে হুমড়ি খেয়েও বেশ সামলে নিচ্ছে, ঠিক রাজন্যার মতো। মন্দ কপালের গুণ আছে বলতে হবে! সামলে চলার অভ্যেসটা রপ্ত করতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হলো না তাহলে! ঘা খেতে খেতে সব সয়ে গেছে আর কী! তবে খানিকটা আফসোস তো থেকেই যাচ্ছে; ব্রাহ্মণবেড়িয়া থেকে এই জল কাদা উপেক্ষা করে যার জন্য জগৎপুরে আসার বাহানা খুঁজছিলো যে তার কুমারী বুকের প্রথম বুক টিপঢিপ, অপরিণত বয়সের ইঁটুলি মার্কা প্রেম আর নিষিদ্ধ সুখের লজঞ্জুস সে এক এবং একমাত্র প্রণয়, প্রণয় আর প্রণয়। আজ সে সুখের লজঞ্জুসের সাধ থেকে  চিরবঞ্চিতের দলে চলে গেলো। সাধ আর সাধ্যের দ্বন্দ্ব হয়তো চিরকালের! একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো- "হায় রে পুরুষ! কত সহজে তুমি নারীকে বলির পাঁঠা করে দাও, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকুও দাও না!"


     "ব্রাহ্মণবেড়িয়া আর জগৎপুর পাশাপাশি দুটো গ্রাম। ব্রাহ্মণবেড়িয়ার তিনমাথার মোড়ের রাস্তা ভাগ হয়ে একটা রাস্তা গেছে ফুলঝোরায় অন্যটা জগৎপুর। জগৎপুরেই রথযাত্রায় জিলিপি পাঁপড়ের ছলে প্রণয়ের সাথে দেখা করতে আসা রাজন্যার। মৃদুলদা থাকেন ফুলঝোরায়। রথযাত্রাকে সামনে রেখে একটা সামান্য ঘটনা ঘটে গেলো, অথচ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিমেষের মধ্যেই যে বিশেষ কাণ্ড ঘটে গেলো তার জন্য উপস্থিত তিনজনের কারো তেমন দোষ ছিলো হলপ করে বলা যায় না। এক্ষেত্রে রাজন্যার দায়ের কণামাত্র আছে কিনা বিচার না করেই দায়ের শতভাগ দোষ আরোপিত হলো, এ মন্দ বরাত ছাড়া আর কী! পাবার নয়তো যাবার ছিলো, পাওয়া ছেড়ে তাই চলে গেলো প্রণয়। রাজন্যা জানে না মৃদুলদা কেন মালাটা ছুড়েছিলো, জানতে চায় না। শুধু সুন্দর জুঁই ফুলের মালাটাকে সে মাটিতে পড়ে নষ্ট হতে দিতে চায়নি বলেই ধরে ফেলেছিলো‌। হতেও তো পারে রাজন্যা প্রণয়ের প্রেমের সন্ধিক্ষণে ওই মালা বরমাল্যের মতোই নবপ্রেম বন্ধনের সূচনার জন্য প্রেরিত হয়েছিলো। মৃদুলদার যদি প্রেম ভাঙারই উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে এই রত্রযাত্রায় দুজনকে মিলিয়েছিলো কেন? এই সাধারণ কথাটা একটিবারও ভাবলো না প্রণয়? নিজের বন্ধুকে যে বিশ্বাস করে না সে সদ্য পরিচিতা কোন মেয়েকে বিশ্বাস করবে ভাবাটাও ভুল ‌।


       কখন যে সন্ধে পেরিয়ে রাত নেমেছে, অন্ধকার ঘন হয়েছে, খেয়াল করেনি রাজন্যা। এবার ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় ফিরতে হবে। রাস্তায় ভিড় নেই আর। এতটাই সুনসান হয়ে গেছে, একা একা ফিরতে হবে জেনে কেমন গা ছমছম করছে তার। দোকানপাটে লোকেরা সব লাভের কড়ি গুনতে ব্যস্ত, কত লাভ হলো জেনে হয়তো তৃপ্ত হতে চাইছে তারা। চুলোর আঁচ নিভু নিভু হয়ে এসেছে। রথ আজ আর জগৎপুরের আটচালায় ফিরবে না, জগৎপুরের শেষ প্রান্তে নাগেরবাজারেই থেকে যাবে; তাই হয়তো বিক্রিবাটা আর হবে না জেনেই দোকানদাররা পাততাড়ি গুটোবার মুখে। তাছাড়া গ্রামের দিকে ভিড় জমানোতে যতটা উদযোগী, পাতলা করতেও ততটাই তৎপর। কিন্তু সাতপাঁচের হেরাফেরিতে মা'র ফরমাসের জিলিপি পাঁপড় কিছুই তো কেনা হলো না! ইচ্ছেও ছিলো না তেমন। পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে এক একবার যে শিউরে উঠছে না এমন নয় তবে, বাড়ির শাস্তি শরীর দিয়ে উসুল হয়ে যাবে। আজকের রাতে খেতে পাবে না, এক ঠ্যাঙে দাঁড়াতে হবে বা রাতভর দরজার বাইরে বারান্দায় রাত কাটাতে হবে এই তো! এগুলো গা সওয়া হয়ে গেছে। ভাবুক কিশোরী মনের সদ্য হওয়া ঘা'টা হয়তো এতো সহজে শুকোবে না, এমন কোন মলমও নেই যা দিয়ে মুহূর্তের জ্বালা কিছুটা হলেও কমতে পারে।


        একান্তে পথ চলতে চলতে রাজন্যার মনে হলো আচ্ছা প্রণয় চড় মারার পর মৃদুলদা ধরে ফেললো কেন? এতো তাড়াতাড়ি সামনে হাজির হলোই বা কীভাবে? সে কি জানতো এমন ঘটনা ঘটতে পারে? যদি জানতো তাহলে মালাটা ছুড়লো কেন? তাছাড়া প্রণয় চলে যাবার পর সেই বা কোথায় গেলো? কোন কথা না বলেই সেখান থেকে তার কেটে পড়ার মানেই বা কী? উফ্ পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে! কিচ্ছু ভালো লাগছে না। প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে, এমন সময় সাইকেলের ঘন্টি শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরতেই মৃদুলদাকে দেখতে পেলো। না থেমে খানিকটা বিরক্তিতেই আরো জোরে জোরে হাঁটতে থাকলো রাজন্যা। কিছু সময়ের ব্যবধানে অবশ্য রাজন্যাকে ধরে ফেললো মৃদুলদা। এবার মৃদুলদা রাজন্যার হাতে ধরিয়ে দিলো একটা প্যাকেট। বললো, "এটা নিয়ে বাড়িতে যাও, কিছুই তো খাওয়ানো হলো না, আমিই তোমায় আসার জন্য বলেছিলাম তাই কিছু জিলিপি আর পাঁপড় কিনেছি তোমার জন্য।" রাজন্যা কোন কথা না বলে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে একটু দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লো।


                        এরপর আগামী সপ্তাহে......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ