Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪৩




ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি  / রঙ্গনা পাল  / পর্ব-৪৩


           কামনা বাসনা জৈবিক প্রবৃত্তির ঠেলা মাড়িয়ে রাজন্যা নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। রাজর্ষি বড় হচ্ছে, পড়াশোনা চলছে নিজের আগ্রহে। বাবার আচরণ, মা'র দুঃখ, রোজকার লড়াই, সমস্তকিছু যেন রাজর্ষিকে বড় করে দিয়েছে। নিজেরটা নিজেই বুঝে নিতে শিখেছে।  লেখাপড়াও করছে নিজের দায়িত্বে। এইটুকু বয়সেই মানিয়ে নিতে শিখে গেছে। কথা বলে বোঝদারদের মতো। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলে না মোটে। সব থেকে বড় কথা যে বয়স পর্যন্ত ছেলেদের বাবা মা তাদের ছেলেদের আগলে রাখে, প্রতি মুহূর্তে বিপদ থেকে সতর্কে রাখে, বিশেষ যত্ন নেয় সেই বয়সে এসে রাজর্ষিকেই উল্টে তার বাবা মাকে দেখে রাখার দায়িত্ব নিতে হয়েছে, রীতিমতো তাদের সমঝে চলতে হচ্ছে; ভাবা যায়! রাজন্যার এখন যা মানসিক স্থিতি তাতে ছেলে কী করে, কী খায়, কীভাবে ছেলের জীবন কাটছে কোনটাতেই তেমন নজর নেই। অবশ্য রেণুকা অভিভাবকের মতো সবটা সামলে চলছে। সে এসেছিলো পেট-চালানোর তাড়নায় কাজের মেয়ে হয়ে এখন সে-ই পরিস্থিতির আবহবিকারে রাজন্যার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠেছে ।


         রাজন্যা স্বাধীনকে নতুন জীবন দিয়েছে বলে এতদিন জোর করেই রাজন্যার কাছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে থেকে যেতে হয়েছিল। হাওয়া বদলেও যেতে হয়েছিল কিন্তু ওখান থেকে ফিরে রাজন্যার পাগলামি মেনে নিতে পারছে না, শরীর নিয়ে টানাটানি করেও লাভ হয়নি। এখন আবার শিবের জটা পড়েছে, মাথায় ঠাকুর চেপেছে। সকাল থেকে রাত্রি চলছে ঠাকুরের আরাধনা। সে নাকি মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছে, রটন্তি কালীপুজোর আয়োজন চলছে। চাকরি ছেড়ে এসব হচ্ছে। তার ঘাড় ভেঙে এবার চলবে নানা কৃচ্ছ্রসাধন! বিরক্তিকর ব্যাপারস্যাপার! এবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওদিকে কামিনীর অত্যাচার কমেনি মোটে। সে বারেবারেই হুমকি দিচ্ছে আর কত দিন সে অপেক্ষা করে থাকবে। তাছাড়া কতদিন হয়ে গেলো কামিনীর থেকে দূরে আছে। নারী শরীরের গন্ধ ছাড়া কেমন করে কাটবে তার দিন। এরমধ্যে রাজন্যার শরীর হাতড়ে কোন লাভ হয়নি।  মরা ক্যাকলাসে হাত রাখছে মনে হয়। স্বাধীন এভাবে তার জীবন নষ্ট করতে পারবে না। মানছে রাজন্যার জন্য সে এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু সে তো মরে যেতেই তো চেয়েছিলো। কামিনীর চাপ আর রাজন্যার উদাসীনতার চক্করে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিলো। মনে পড়ছে সেই রাতের কথা-

কামিনীর ঘরে গিয়েছিল শারীরিক চাহিদা মেটাতে। কামিনীও তার লোভনীয় শরীরটা ছেড়ে দিয়েছিল। ভালোই খেলা চলছিলো আর একদম চূড়ান্ত মুহূর্তে কামিনী ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিলো স্বাধীনকে, আর বলেছিল-

          -আগে তোর বউ-এর সাথে ছাড়বাড় করে আসবি, তারপর তোর ইচ্ছে পূরণ করবি।

         -এ আবার কেমন কথা! আজ তো ...

         -ছুঁবি না শয়তান ..যা তোর কষ্টিপাথরে খোদাই করা চামবাদুড় নীরস বউটার কাছে গিয়ে তোর তেষ্টা মিটিয়ে আয়..নতুবা চিরদিনের মতো তাকে ছেড়ে আয়..

         -তোমার জন্য আমি করিনি এমন কিছু আছে? আমার রোজগারের অর্ধেকের বেশি তোমার জন্য খরচ করেছি, করে চলেছি..

         -তো, আমিও তো তোমাকে আমার সবটা দিয়েছি, আমারও তোমাকে নিজের করে পাবার অধিকার আছে...


           ওরকম একটা অবস্থা থেকে নিজেকে বের করতে পারেনি স্বাধীন, চরম অপমানিত হয়েছিলো নিজের কাছে। মনে হয়েছিল যে এতদিন নারীকে পণ্য করে রেখেছিলো, যার কথায় নারীরা বিছানায় লাইন লাগিয়ে দিতো, একবার ইশারা করলেই ভোগ করার রসদ পেত আজ নিজের অবস্থানটা কোথায় এনে ফেলেছে! একটা দু'টাকার মেয়েছেলে তাকে তার জায়গাটা দেখিয়ে দিচ্ছে, এর থেকে অপমানের আর কী আছে! সেদিন রাজন্যার ফ্ল্যাটে এসেছিল একটু শান্তির জন্য, একা থাকার জন্য, নিজের সাথে বোঝাপড়ার জন্য। সে রাজন্যার অনুপস্থিতিতি জেনেই এসেছিল। তবে ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারবে কিনা সংশয় ছিলো।যাই হোক শেষপর্যন্ত ম্যানেজ করতে পেরেছিলো।গভীর রাতে ছাদে উঠে পায়চারি করতে করতে নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়ার পড় ভেবেছিল তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, তার চলে যাওয়াটাই শ্রেয়। রাজন্যার অ্যামিক্সাইডের পাঁচ পাঁচটা পাতা চায়ের লিকারের সাথে গুলে চালান করেছিলো পেটের মধ্যে...আর তারপর....যাই হোক এখনও বেঁচে আছে যখন তখন শেষ চেষ্টা তো করতেই হয়। সুইসাইড অ্যাটেম করার পর কামিনীও সামান্য ভয় পেয়েছিল, ভেবেছিলো তার সোনার ডিম পাড়া হাঁসটা হাত ফসকে বেরিয়ে গেলো বুঝি! হয়তো তাই তার গলার সুর কিছুটা নরম, আর স্বাধীনের জন্য ডাকে গরজ পাওয়া যাচ্ছে।


            স্বাধীন আবার কামিনীর কাছে ফিরে যাবে ঠিক করেছে। মাঝে মাঝে এসে বরং রাজন্যাকে দেখে যাবে‌। রাজন্যা থাক্ নিজের মতো। ও ওর মতো করে শান্তি খুঁজে নিক্। এখন আর রাজন্যার কোন কাজেই বাধা দেবে না স্বাধীন। আর হ্যাঁ, তার দুশ্চরিত্র মনের অবস্থা বুঝতে না দিয়ে বরং বলে যাবে "অনেকদিন নাটকদল থেকে দূরে আছে, নতুন একটা নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে।" অবশ্য এটাও সত্যি স্বাধীনের সাধের নাটকসংস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাকে আবার নতুন জীবন দিতে হবে। এসমস্ত মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আপাতত রাজন্যার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার মাধবপুরের সীমানা ছাড়িয়ে মোতিগঞ্জে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কামিনীকে নিয়ে উঠল। চোখে নতুন আশার ঝলক, ভেতরে দৃঢ়তা আর বাইরে পেশির শক্তি নিয়ে আবারও এক মিথ্যে প্রতিশ্রুতির সাথে সহবাসে লিপ্ত হলো স্বাধীন।


             - এরপর আগামী সপ্তাহে....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ