Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি /রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪৪


ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি /রঙ্গনা পাল /পর্ব-৪৪

          চলার পথে যতটুকু পেয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারিয়েছে। সয়ে গেছে সবটাই। কোন অনুভূতি রাজন্যাকে বিচলিত করতে পারেনি। কেটে যাওয়া এই ক'দিন স্বাধীন খানিক কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠেছিল, প্রমাণ করার চেষ্টা করছিল রাজন্যার দেওয়া নতুন জীবনে সে খুশি, এভাবেই বাকি জীবনটা আপস করে কাটিয়ে দিতে পারবে, সে কি তার কথা রাখতে পারলো! মরে গেলেও সে তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারবে না, এটা তো অনেক আগে থেকেই নিশ্চিত হয়ে আছে। মন্দের ভালো স্বাধীনের চলে যাওয়াটা আলাদাভাবে রাজন্যার মনে দাগ কাটলো না। ভালোই হয়েছে একটা মানসিক বিকারে রয়েছে সে, নয়তো আবারও একটা স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হতো। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো তাকে এভাবেই কাটাতে হবে। স্বাধীনের কৃতকর্মের সাজা পরোক্ষে সেও পাচ্ছে। এই পৃথিবীতে ভালো থাকার অধিকার তো সবার আছে, তার-ও আছে হয়তো তাই তার মধ্যে ভক্তিভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। আধ্যাত্ম সাধনায় মুক্তির সন্ধান মিললেও মিলতে পারে।


           রাজর্ষি তার মায়ের মাথায় জটা নিয়ে ঘরে পড়ে থাকা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এখন মা আগের মতো বাবুসোনা বলে আদর করে না, খাওয়ায় না, স্কুলে নিয়ে যায় না। সব চেয়ে বড় কথা তাকে নিয়ে কোনরকম মাথা লাগায় না। দিনের পর দিন মা'কে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না। সে মাকে ডেকে বলে-

           - তোমার মাথার জটা কেটে ফ্যালো মা, তোমাকে একেবারেই ভালো লাগছে না।

           - না বাবা, ঠাকুর রাগ করবেন 

           - মা, তুমি ভালো নেই..

হো হো করে হেসে উঠলো রাজন্যা। তারপরে বললো-

           -আমি খুব ভালো আছি। আমার শিবুবাবা, আমার মা কালী, আমার কৃষ্ণ এদের সবাইকে নিয়ে ভালো আছি বাবা।

            -তুমি আবার কাজে যাও মা, বাইরে বেরোলে তুমি অনেক ভালো থাকবে।

          -আমি ওসব ছেড়ে দিয়েছি। আর কোথাও যাবো না..আমার ঠাকুর মানা করেছেন যে...

          -মা'গো তুমি সেই আগের মতো হয়ে যাও মা....

           -তুই বড় হয়ে যা, রেণুকা তোকে দেখে রাখবে। আমি সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা নিয়ে এখান থেকে চলে যাবো...

           - তোমার ওষুধ তুমি ঠিক করে খাচ্ছো না, আমি রেণুকা মাসিকে বলবো তোমাকে যেন ঠিকমতো ওষুধ খাইয়ে দেয়...

            - শয়তান ছেলে আমাকে অসুস্থ বলছিস...আর কোনদিন বলবি না...

              -মা....

              -আমি তোর মা নই, মা কালী তোর-ও মা, আমারও মা, আজ থেকে মা কালীকেই মা বলে ডাকবি...নইলে পাপ হবে, হ্যাঁ পাপ হবে পাপ..

আর কোন কথা না বলে এক ছুটে বারান্দা পার হয়ে ঘরে এসে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো রাজর্ষি। কিছুক্ষণ পরে, মা ঠাকুর ছেড়ে ছোট ঘরটায় চলে গেলে আবার বেরিয়ে এসে সে ঠাকুরের সামনে এসে দাঁড়ায়। নতজানু হয়ে হাত জোড় করে বলে, "আমার মা'কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও ঠাকুর"।


        কামিনী আজ সুন্দর করে সেজেছে। অবশেষে স্বাধীন ফিরেছে তার কাছে। আজ আবার নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার পালা। এবার আর স্বাধীনকে কাছছাড়া করবে না। সিঁথিতে স্বাধীনের নামের সিঁদুর পরেছে। কপালে লাল টিপ। মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের ছড়া। সে তার অথর্ব বাবা-মাকে বুঝিয়েছে, স্বাধীনের বউ পাগল হয়ে গেছে, তার সাথে ছাড়াছাড়ি করে স্বাধীন তাকে জটেশ্বর মন্দিরে বিয়ে করেছে। এখন থেকে স্বাধীন এখানেই থাকবে। কামিনীর বাবা-মা এতদিন জানতো স্বাধীন শুধু কাজের সূত্রে তার মেয়ের কাছে আসে। তখন মনে খটকা থাকলেও কিছু করার উপায় ছিলো না। আজ অন্তত এটা শুনে ভালো লাগলো স্বাধীন তাদের মেয়েকে বিয়ে করেছে। অন্দরমহলে একপ্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছে তারা, তবু মেয়ের সংসার হয়েছে শুনে কিছুটা হলেও শান্তি। মেয়েকে কিছুই দিতে পারেনি, উল্টে মেয়ের উপার্জনে পেট চলছে এও তো কম অস্বস্তির নয়‌। ঈশ্বরের মারে উঠে দাঁড়াবার সাধ্য যে তাদের নেই অতএব বাকি জীবনটা মরে বেঁচে চালিয়ে নিতে হবে কোনরকমে।


           কামিনী বুঝে গেছে স্বাধীন ছাড়া তার গতি নেই। স্বাধীন যখন আমরিতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল তখন অন্তিমের সাথে কিছু সময়ের জন্য একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল কামিনীর। বেশ কিছুদিন সহবাস করার পর কামিনী তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে অন্তিম সরাসরি বলে দিয়েছিল- "তোমার মতো মেয়েকে শয্যাসঙ্গিনী করা যায়, অর্ধাঙ্গিনী নয়" । নিজের জায়গাটা এখন যথেষ্ট জেনে গেছে সে। একটা সময় সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রূপের অহংকারে নিজেকে পাটরানি ভাবতে শুরু করেছিল, কালের পদক্ষেপে গা বাঁচাতে এখন সমাজে বাস করার জন্য মিথ্যে হলেও তাকে একটা সম্পর্কে আসতেই হলো। সিঁথিতে সিঁদুর দেখে স্বাধীন হকচকিয়ে গেলে কামিনী বুঝিয়েছে এখানে থাকতে গেলে এছাড়া উপায় নেই। স্বাধীন বলেছে-

            -এ সিঁদুর তো আমি তোমায় পরাইনি 

             -আমি নিজেই পরেছি, তোমার নামে।

             -কেন পরেছো?

             -বাবা-মার কথা তো ভাববে..

             -আগেও তো তোমার সাথে থেকেছি, ওঁরা কিছুই টের পাননি, তাহলে?

            -মানছি আমার এই ঘরটায় কী হচ্ছে, বাবা-মা অন্দর থেকে কখনও টের পাবে না, তাই বলে এমন করে কতদিন চলবে? পাড়ায় ঢুকতে পারবে তো?

              -আমার ভালো লাগছে না, সিঁদুরে এলার্জি আছে, ওটা ধুয়ে এসো। আর এসব মালা পরে সঙ না সেজে যেমন ছিলে তেমনই এসো। একটু তাড়াতাড়ি...বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। কাজ আছে, বেরোতে হবে...


             -এরপর আগামী সপ্তাহে.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ