Header Ads Widget

বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা আকাদেমি (Reg No:1900200271/2023)

ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪৯


ঘর বেঁধেছে ঝড়ের পাখি / রঙ্গনা পাল / পর্ব-৪৯


     অনেক ঘুরেছে স্বাধীন সুখের সন্ধানে, ফুর্তি করার তাগিদে। ভালোসময়ের সবটাই অবহেলায় তার হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। চুলে পাক ধরেছে, মনে এসেছে স্থিরতা। এতদিনে মনে হচ্ছে তার জীবনে কোন স্বাধীনতা নেই। পরাধীনতার জগদ্দল পাথরটাকে কিছুতেই সরাতে পারছে না, হাঁপ ধরে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে আছে কতকগুলো অসুখের চারা, যেগুলো পোঁতার কোন জায়গা নেই। অগত্যা মনের ভেতর সেগুলো বড় হচ্ছে। অথচ একজন সুখী মানুষের যা যা থাকা দরকার সবটা এখনও আছে তার কাছে‌। ‌অথবা বলা ভালো একমাত্র তার নিজের দোষেই সে সুখপাখিটাকে হারিয়ে ফেলেছে। মনের মধ্যে যে সুখ-ফানুস ঘোরাফেরা করছিল সেই ফানুসের আসল চেহারাটা সে দেখে ফেলেছে। এখন তাই কামিনীর দেহটাকে আবলুস কাঠের মতো লাগে। কামিনী তাকে ধরে আছে, শুধুমাত্র অর্থের মোহে, স্বাধীন তার কাছে ভালোবাসার অর্থে আদৃত নয়। অনেকটা দেরি হলেও বুঝেছে স্বাধীন। জন্মের পর থেকে তার ছেলেটা বাবার আদর পায়নি। সেই ছেলেটার জন্য অজান্তেই একটা স্নেহের ধারায় ভেসে যাচ্ছে সে। আর বিয়ের পর থেকে যে স্ত্রীকে কখনও মর্যাদা দেয়নি, তার জন্য হৃদয় উদ্বেল হয়ে উঠেছে বলেই আজ লজ্জা, অপরাধবোধ, ভয় সবটা কাটিয়ে ছুটে এসেছে। রাজন্যাকে সে যতটা চিনেছে, তার উপর ভিত্তি করে বলা যায়, রাজন্যা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেবে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না কেনো?


         নাটকের মঞ্চ নয়, আজ বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। ভেবেছিল খুব সহজেই বলে ফেলবে- "আমাকে মাফ করে তোমার কদমে কদম ফেলার অনুমতি দাও। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তোমার পাশে হাঁটতে চাই"। মুখে কে যেন আঠা লাগিয়ে দিয়েছে। রাজন্যা এসে আবার জানতে চায়-

        -কই বললে না তো?

        -কী বলবো?

         -যা বলতে এসেছো..

         -তোমার তাড়া আছে?

          -হ্যাঁ, রাজর্ষিকে নিয়ে বেরোবো একটু।

          -আমি তোমাদের সাথে যাই?

          -না...

রাজন্যার 'না' উচ্চারণের দৃঢ়তায় অবাক হয়ে গেলো স্বাধীন। এতোটা উপেক্ষা তার জন্য? তাহলে যে কথাগুলো বলতে এসেছে, সেগুলো মেনে নেবে তো? নাকি প্রত্যাখান করবে। না, না আর কিছু হারাতে চায় না স্বাধীন।


         রাজর্ষি মাকে বলে, "আজ থাক্ মা, অন্যদিন যাবো। অনেকদিন পরে বাবা এসেছে আমরা ঘরে থাকি বরং.."ছেলেটার বাবার প্রতি কতটা টান, ওর বলা কথাগুলো শুনে রাজন্যা বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে সে ভাবে, তার প্রতি স্বাধীনের টান নাই বা থাক্, ছেলেটার সাথে সে যদি ঠিকঠাক একটা সম্পর্ক রাখতো তাহলে ছেলেটার মনে এতটা কষ্ট বাসা বাঁধতো না। আর এই কারণেই সে কখনও স্বাধীনকে ক্ষমা করতে পারবে না। রেণুকার পরিবর্তে রাজন্যা নিজে রান্নাঘরে ঢোকে। সন্ধ্যে উত্তীর্ণ হয়ে রাত আসর বসায়। খেতে বসে স্বাধীন বলে, "অনেকদিন পর এত সুস্বাদু খাবার খেলাম"। রাজন্যার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না, তবে মনে মনে সে বললো-"আমি অতিথি সেবা করেছি মাত্র, স্বামী সেবা নয়"। মুখে বললো- ফিরবে না এখানে থাকবে?"

       -কোথায় ফিরবো?

       -যেখানে এতদিন থেকেছো।

       -এবার থেকে এখানেই থাকবো।

       -আজকের রাতটা থাকতে পারো, বরাবর থাকতে চাইলে অন্য ফ্ল্যাট বুক করে নিও।

এ কোন্ রাজন্যাকে দেখছে স্বাধীন! এ নারী নাকি ফণিনী? কোমলতার লেশ মাত্র নেই, সবসময় কেবল হিস্-হিস্ শব্দের আতিশয্য। 


      অন্যদিন ছেলে মা আলাদা আলাদা থাকে, আজ একটা রুম ছেড়ে দিলো স্বাধীনের জন্য। অন্যটায় তারা শোবার উদ্যোগ করতেই স্বাধীন বলে..

    - তুমি আমার সাথে থেকে যাও..

     -কেনো? ঘুম আসবে না বুঝি?

     -তা নয়, আমি অনেক পাল্টে গেছি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে..

      -তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই।

      -আমার আছে।

     -বেশ, ড্রয়িং -এ বসেই বলো।

      -ছেলে শুনতে পাচ্ছে, ঘরে তো চলো..

      শুনুক, এখানেই বলো। তোমার সাথে এক বিছানায়...না, না আমি পারবো না....

রাজর্ষি শুয়ে পড়লেও বাবা-মার কথা শুনতে পাচ্ছে। ওর মনে আশার দ্যুতি। বাবা মার সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেলে, বাবাও নিশ্চয় তাকে সময় দেবে।  সবার কাছে চিৎকার করে বলবে- "এই দেখো এটা আমার বাবা....আমাকে আমার বাবা খুউব ভালোবাসে...."


             রাজন্যা যখন কিছুতেই ঘরে যেতে রাজি হচ্ছে না, তখন নিচু স্বরে স্বাধীন সাহস করে বলেই ফেললো-

       -আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে?

       -আমি সুযোগ দেবার কেউ না, সবটাই আমার কপাল আমাকে দিয়েছে।

        -দয়া করে না করো না..আমি তোমার সাথে থাকতে চাই...

       -আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না, আবার তোমাকে ডিভোর্সও দেবো না।

       -আজ আমি ডিভোর্স চাইতে আসিনি। থাকতে এসেছি।

       -আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, সকালে ডিউটি বেরোতে হবে। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। কাল আবার তোমাকেও বেরোতে হবে...


                 -এরপর আগামী সপ্তাহে .....

        -

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ